আত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে নয় - গবেষণায় প্রমাণিত প্রাচীন হিন্দু রীতি




নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ে বিজ্ঞানসম্মত নয়। কাকাতো, মামাতো, মাসতুতো ও পিসতুতো ভাই-বোনদের মধ্যে বিয়ের পরিণামে যে সন্তান হয়, তার মধ্যে জন্মগত ত্রুটি দেখা দেওয়ার ঝুঁকি বেশি। দ্য ল্যানসেট সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা নিবন্ধে বিজ্ঞানীরা এ তথ্য জানিয়েছেন।
যুক্তরাজ্যের ব্র্যাডফোর্ড শহরে বসবাসকারী পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক গবেষণা চালিয়ে দেখা যায়, নিকটাত্মীয়ের মধ্যে বিয়ের মাধ্যমে জন্মগ্রহণকারী সন্তানের জিনগত অস্বাভাবিকতার হার সাধারণ শিশুদের তুলনায় ৩০ শতাংশ বেশি। এসব অস্বাভাবিকতার মধ্যে নবজাতকের অতিরিক্ত আঙুল গজানোর মতো সমস্যা থেকে শুরু করে হূৎপিণ্ডে ছিদ্র বা মস্তিষ্কের গঠন-প্রক্রিয়ায় ত্রুটি দেখা দিতে পারে। অবশ্য সার্বিক বিবেচনায় এ ধরনের অস্বাভাবিকতার হার খুবই কম।

গবেষণায় নেতৃত্ব দেন লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এয়ামন শেরিডান। ২০০৭ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে জন্মগ্রহণকারী সাড়ে ১৩ হাজার শিশুকে ওই গবেষণার আওতায় আনা হয়।

ব্র্যাডফোর্ড শহরে দক্ষিণ এশীয় অভিবাসীদের বড় একটি অংশ বসবাস করে। সেখানে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৩৭ শতাংশই রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে রক্তের সম্পর্কের আত্মীয়দের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। সারা বিশ্বে ১০০ কোটির বেশি মানুষ এ রকম সংস্কৃতি ধারণ করে।


হিন্দুরীতির প্রধান মান্য গ্রন্থ মনুস্মৃতি এ বিষয়ে যে দিক নির্দেশনা প্রদান করেছে তা হাজার হাজার বছর ধরে সনাতন ধর্মাবলম্বীরা পালন করে আসছে। পিতা ও মাতার সপিণ্ড তথা সগোত্র নারী-পুরুষের বিবাহকে মনুস্মৃতি নিষিদ্ধ করেছে (মনু. ৩/৫-৬)। উন্নততর প্রজন্মের জন্যই এই বিধান দেওয়া হয়েছে যাতে নতুন প্রজন্ম অধিকতর মেধাবী ও স্বাস্থ্যবান হতে পারে।


এছাড়া যে বংশের লোকের মাঝে অর্শজাতীয় রোগ, আমাশয় বা মন্দাগ্নি, ক্ষয়রোগ (রাজযক্ষ্মা; pthisis), অপস্মার রোগ (যে রোগ স্মৃতিভ্রংশ প্রভৃতি ইন্দ্রিয়বৈকল্য; epilepsy), শ্বেতরোগ ও কুষ্ঠরোগ আছে সেই বংশে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে (মনু. ৩/৭)। এছাড়া জেনেটিক সমস্যা আছে এমন ব্যক্তিকেও বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে, যেমন যার আঙুল বা অন্য কোন অতিরিক্ত অঙ্গ আছে, চিররোগগ্রস্তা, যার কেশসমূহ তামাটে কিংবা কনকবর্ণ, যে কেশশূন্য (অলোমিকা) বা যার শরীরে লোমের আধিক্য, বাচাল, পিঙ্গলবর্ণ চোখ যার তাকে বিবাহ করতে নিষেধ করা হয়েছে (মনু. ৩/৮)। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, এই সব বংশে বা এরূপ কন্যা বা বর বিবাহ করলে বিবাহোত্তরকালে উৎপন্ন সন্তান ক্ষীণকায়া বা সেই সেই রোগাক্রান্ত হতে পারে।

লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকগণ যেন এই বৈদিক সত্যকেই নতুন করে উদঘাটন করে ঘোষণা দিলেন ল্যানসেট সাময়িকীতে।


Previous
Next Post »